কবিতা : শাশ্বতী সান্যাল
১.
মাঝরাতে বৃষ্টি বড় নিদারুণ। এবং সুন্দর।
জলের আওয়াজে জেগে ওঠে মরা পাখিদের ঝাঁক
ক্রমশ দক্ষিণে, আরও দক্ষিণে বাতাস ডিঙিয়ে
তাদের ডানার গাঢ় ঝটপট, চিৎকার, নখরের দাগ
উড়ে যায়। ছেঁড়া পালকের মতো সাদা শিলা ঘুমের ভিতরে
সশব্দে ছড়িয়ে পড়ে
গৃহস্থের বীর্যমাখা চাদরে, স্বপ্নের মধ্যে...
ভয় পেয়ে ছিটকে ওঠে সে মানুষ। তারপর আবিষ্কার করে
পাশের বালিশে তার গৃহবন্দী পাখিটির শব শুয়ে আছে...
২.
বন্ধুদের মৃতদেহ ডানা ঝাপটায়, শুধু ওড়ার সম্মতিটুকু,
- এই দিতে পারি...
শেকলে সন্ত্রাস নিয়ে কত অপেক্ষায় থাকবে ওরা?
ঝড়ের চঞ্চুতে বসে আমাদের কোনো গান নেই
সঙ্গীত প্রাচীন শস্য, এই অনভিজ্ঞ কৃষিমাঠে
জল-হাওয়া-মেঘ,আর দুএক পশলার মতো
স্বরবিতানের কিছু পাতা বেঁচে আছে....
ফসল রোয়ার দিনে কড়িবরগা থেকে
লক্ষ্মীপেঁচা ডেকে ওঠে, এমত বিশ্বাসে
আমাকে জড়িয়ে ছিল বন্ধুদের পুরোনো নখর...
মুখর রক্তের দাগ- এই দিতে পারি। বড়জোর,
অস্ত্রের সংকোচ ঢেকে শমীবৃক্ষে বেঁধে দেব শব
মৃতের বন্ধুরা এসো, ডানা ঝাপটাও। যেন
মরা ফসলের ক্লান্তি বয়ে চলে কবিতাউৎসব...
৩.
মুখের ছায়া কি আজ অনুতপ্ত? জলের গভীরে
ঘাই মারা মাছের মতন তার গোপন ও সাতরঙা
কোনো ইচ্ছে নেই! সুযোগসন্ধানী এক মাছরাঙা
মেঘের গভীরে ছোঁ মেরেছে আজ,আর অনতিদূরেই
রঙিন দরাজ আলোবাতাসের এ সকাল, তার মৃত্যুদিন...
অনুশোচনার আগে ডানা ঝেরে নেবে পাখি
শল্ক আর জলকণা বাতাস সাঁতরে
একে অন্যের পাশে ঝরে পড়বে... এবারে বলুন
শেষ ইচ্ছে কিছু আছে? ঘুম? নির্জনতা?মৃত প্রেমিকের মুখ?
নেই! তবে আসুন, নীরবে পাক খেয়ে নেমে আসা
রঙিন ঠোঁটের ওই পাখিটিকে আশীর্বাদ করি
ওকে বলি, হত্যাদৃশ্য থেকে
অনুতাপও নিও তুমি। শুধুমাত্র আহার নিও না...
খুব ভালো লাগল শাশ্বতী।
ReplyDeleteঅভিভূত
ReplyDeleteখুব ভালো লেখা।
ReplyDeleteঅপূর্ব সুন্দর!
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteপ্রতিটি লেখাই অসামান্য । অনেকদিন পর তোমার আত্মার গভীর থেকে এমন লেখা উঠে এসেছে যা নিঃশব্দ সময়ের অনবদ্য উচ্চারণ । ভীষণ ভাল লাগল ।
ReplyDeleteশুভদীপ নায়ক
চমৎকার লেখা । সবগুলো লেখাই ছুঁয়ে গেল । শাশ্বতী সান্যাল এর কবিতা আমার ভীষণ পছন্দের ।
ReplyDeleteচমৎকার লেখা
ReplyDeleteভাল লাগলো কবিতাগুলি ৷
ReplyDeleteবিমোহিত! মৃতের বন্ধুরা এসো ডানা ঝাপটায়... মন খারাপ হয়ে গেল।তিনটি কবিতাই মর্ম স্পর্শ করে, হাহাকারময়...
ReplyDeleteভালো লাগলো
ReplyDeleteসব লেখাই ভালো কিন্তু তৃতীয় লেখাটি অসাধারণ উচ্চতা পেয়েছে—প্রীতমদা
ReplyDeleteখুব খুব ভাল লাগল
ReplyDeleteদারুণ
ReplyDeleteখুব ভালো লাগল শাশ্বতী, প্রতিটিই নিজেদের মতো সুন্দর।
ReplyDelete