কবিতা : অর্থিতা মণ্ডল



আত্নলিপি 

এক

আজ কতবার তোমাকে খুঁজেছি জানো।আজ কতবার ভেবেছিলাম নদীর কথা।কতবার তীব্র হয়েছে আকন্ঠ আবেগ।কবে যেন বিধাতা কপালে রেখেছেন নীলকন্ঠ আগুন।আর আমি পুড়ে যাব বলে নিঃশব্দে পান করেছি বিষ।ততবার  তুমি দিয়েছ অমৃত স্বাদ।বিষ, অমৃতর সহাবস্থানে আমি এক জলনারী।জলনারী পুড়ে গেলেও নিস্তব্ধ বিহার। জাদুদণ্ড দাও তুমি প্রেম,আর আমি পুড়তে পুড়তে বারবার ফুল হই।আরও একবার ধ্যানে বসি,জন্ম জন্মান্তর ধরে রাই হই।রাই আমি অনন্ত প্রবাস।বারান্দায় রোজ এসে ডেকে যায় শুক - সারি গান।তোমার বুকের ওম টুকু পাব বলে আমি চেয়ে নেই অনন্ত বৈঠা।আমার ভাঙা বাড়ির ভেতর মৃত ঘর কতবার তোমায় ডাকে শোনো। সবটুকু সুখ,সবটুকু শান্তি তোমায় দেব বলে আমি ডুবতে ডুবতে জাগি,ভাসতে ভাসতে তোমার জন্যে বিছিয়ে রাখি নির্ভার আশ্রয়।তুমি রোজ বলেছ আমায় " রাইকিশোরীই শ্রিয়া হয় জেনো।"


দুই

বৃষ্টি হলে এখন আর মেঘ জমে না।আমি যক্ষপ্রিয়ার কথা ভাবি।জানো,এখন আর বিরহর ভেতর কোনো প্রাচীন শিল্পীর রূপ চোখে পড়ে না।অবসন্ন দিন জুড়ে ভারি হয় শ্বাস।বৈষ্ণবী রং নিয়ে কেঁপে উঠি। তখন আঘ্রাণ ভেসে আসে তোমার বুকের ওমের।আরও একবার পুড়ে যাই রাই।জেগে ওঠো রাই কিশোরী নিশাচরী রাগ।তুমি এখন গান গাও,আমি ভাবি একদিন জমেছিল মেঘ। উথাল পাথাল ঢেউ,কত দূর প্রবাস।শ্যাওলা জড়িয়ে আছে তোমার আমার বাড়ি।অতঃপর আমাদের খিদে পায় খুব। আর নদী নদী গন্ধ মেখে তুমি রোজ এক থালা চাঁদ বেড়ে ফেল।


তিন

সেই ঘরটার কথা মনে পড়ছে।তুমি ক্ষেত জমিন কৃষক পুরুষ।সন্ধ্যে নামলে তুলসী তলায় আলো দিতাম।আমার রাই কিশোরী শরীরে তখন অসংখ্য তারা।কৃষাণী বধূ আমি তোমায় ছুয়ে  রাতের আলোয় ভেসে যেত ঘর।এসব উপাখ্যানের বাইরে এসে দাঁড়াই।ফিরতি বাসে জানলার ধারে মুখ রাখি।তুমি তখন চলে যাও পুতুল খেলার ঘরে।এদিকে ঝড় ওঠে।আকন্ঠ তেষ্টায় ঘাম মুছলে তোমার স্পর্শের আঘ্রাণ শরীরে আঁকে শান্তির সুখ।তবু তুমি ভুলে যাও লক্ষ্মীর ঝাঁপি। নিশ্চুপ চর্যার গরমের মেঘ।খুলে বসি পাঁচালি কোজাগরী আলো।বিস্মৃত সব কথা,ঈশ্বর তুমি।তোমার ঈশ্বরী আমি।ঠোঁটে ঠোঁটে পান করি দেহাতি মধু।


চার

আপাতত অশ্রু পুড়ে রাখছি কাগজের ঠোঙ্গায়।তোমার বুকের ওমে জন্মান্তরের শান্তি। নারকেল গাছের ছায়ায় এ আমাদের নিপাট সংসার।পুতুল পুতুল আলো মহাশূন্য তুলে রাখে এ জন্ম ঘোর।স্নান সারি,আমি তুমি কথকতা আজন্ম বিশ্বাস।এ চৌকাঠ জুড়ে লক্ষ্মী এঁকেছেন পা।শরীরে শরীর মেশে ,হৃদয় তো মিশে আছে নক্ষএ প্রপাত।জানো আজ আমি বারবার ফুটে উঠি তোমার ঈশ্বরী ফুল।

Comments

Popular posts from this blog

কবিতা : শাশ্বতী সান্যাল

কবিতা : বেবী সাউ

কবিতা : রুমা তপাদার